দরুদে ইব্রাহিম
নিউজ ডেস্ক

ফাইল ছবি
দরুদ শরীফ পাঠ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হাবীব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর ওপর দরুদ পড়তে স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দেন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ্) স্বয়ং এবং আমার ফেরেস্তাগণ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরুদ পাঠ পূর্বক সালাম প্রেরণ করিয়া থাকি; হে মুমিনগণ তোমরাও তাঁহার ওপর দরুদ পাঠ কর এবং সালাম প্রেরণ কর।’ (পবিত্র কোরআন: ২২ পারা, সূরা: আহযাব, রুকু: ৭, আয়াত: ৫৬)
পবিত্র কোরআন ছাড়াও হাদিস শরীফে দরুদ শরীফ পাঠের গুরুত্ব ও বিশদ বিবরণ রয়েছে। দরুদ শরীফ পাঠে অশেষ সাওয়াব, রহমত, বরকত পাওয়া যায়। রাসূল (সা.) এর প্রতি মুহাব্বাত নিয়ে দরুদ পাঠ করা উত্তম ইবাদত। রাসূল (সা.) নিজেও দরুদ পাঠ করার জন্য তাঁর উম্মতদের বলেছেন, রাসূল (সা.) দরুদ পাঠের ফজিলত ও মাহাত্ন্য উম্মতদের জানিয়ে দিয়েছেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন।’ (সহিহ মুসলিম)
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের নাম শোনার পর দরুদ শরীফ পাঠ করা ওয়াজিব। রাসূল (সা.) নাম মুবারক উচ্চারণ অথবা শোনার পর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এই দরুদ বলা ওয়াজিব। যদি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম পড়া না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে গুনাহগার হতে হবে। কোনো আলোচনায় বা মাহফিলে যদি নবীজি (সা.) এর নাম নেয়া হয় তবে প্রথমবার সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলা ওয়াজিব। এরপর যতবার নবীজি (সা.) এর নাম নেয়া হবে ততবার সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলা মুস্তাহাব। তবে, একবারও যদি দরুদ-সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম না পড়া হয় সেক্ষেত্রে গুনাহগার হতে হবে।
তাই কোনো আলোচনায় রাসূল (সা.) এর নাম যতবার নেয়া হবে ততবার সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম পড়ে মুস্তাহাব সাওয়াব পাওয়া যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হয় সে যেন তৎক্ষণাৎ আমার ওপর দরুদ শরিফ পড়ে।’
দরুদ শরীফ পাঠ করলে সহজে দোয়া কবুল হয়ে যায়। হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) বলেন, নিশ্চয় বান্দার দোয়া-মোনাজাত আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলানো থাকে, তার কোনো কিছু আল্লাহপাকের নিকট পৌঁছে না যতক্ষণ না বান্দা তার নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করবে। (তিরমিজী শরিফ)।
মহান আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে রহমত স্বরূপ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন শরীফে উল্লেখ করেছেন, ‘আমি আপনাকেই শুধুমাত্র সমগ্র বিশ্ব জাহানের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা: আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭ )
তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা জানাতে বারবার দরুদ পাঠ করা হয়। দরুদ শরীফ পাঠে পাঠকারীর দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, দশটি নেকী হাসিল হয় এবং দশটি করে গুনাহ মুছে যায়।
পবিত্র জুমার দিনে দরুদ শরীফ পাঠের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দরুদ শরিফের আমল কাল কিয়ামতের পুলসিরাতের অন্ধকারে আলোর কাজ করবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার প্রতি ৮০ বার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহপাক তার ৮০ বছরের সগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আরো বলেন , ‘কেয়ামতের দিন আমার সুপারিশের নিকটবর্তী সেই ব্যক্তি হবে যে আমার প্রতি অধিক মাত্রায় দরুদ পাঠ করবে। (তিরমিজি)
মহান আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর ভালবাসায় সিক্ত হওয়ার জন্য দরুদ শরীফ বারংবার পাঠ একটি উত্তম মাধ্যম। অন্তর পরিশুদ্ধির জন্য অন্যান্য ইবাদতের মতো দরুদ শরীফ পাঠ উত্তম আমল।
সালাতের মধ্যে দরুদে ইব্রাহিম পাঠ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। দরুদে ইব্রাহিম বেশ ফজিলতপূর্ণ। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে এই দরুদ পড়া হয়। সালাত ছাড়াও অন্যান্য যেকোনো সময় এই দরুদ শরীফ পাঠে রয়েছে মুস্তাহাব সাওয়াব।
দরুদে ইব্রাহিমের আরবি, অর্থ, উচ্চারণ:
আরবি: اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌاللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيد
উচ্চারন: আল্লাহুম্মা সাল্লেআ’লা মোহাম্মদাও ও আ’লা আলি মোহাম্মদ, কামা সাল্লাইতা আ’লা ইব্রাহিমা ও আ’লা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মোহাম্মাদেওঁ ও আ’লা আলি মোহাম্মদ, কামা বারকতা আ’লা ইব্রাহিমা ও আ’লা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর বংশধরদের ওপর এই রূপ রহমত নাজিল করো, যেমনটি করেছিলে ইব্রাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.) এবং তার বংশধরদের ওপর বরকত নাজিল করো, যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইব্রাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়।
রাসূল (সা.) আমাদের ভালোবাসেন। আমাদের গুনাহ মাফের জন্য সবসময় মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। কাজে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) প্রতি মুহাব্বত দেখিয়ে আমাদেরও বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা অবশ্যই উচিত।
আমরা যখন মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য দোয়া করবো এবং আমাদের গুনাহ মাফের জন্য দোয়া চাইবো তখন দরুদ শরীফ পাঠ করবো। কারণ, মহান আল্লাহর দরবারে মুক্তি ও মাফ চেয়ে মুনাজাত ধরলে, দোয়া করলে তা দরুদ শরীফ পাঠের উসিলায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের প্রতি রহমত ও সালাম পেশের দরুণ সেই দোয়া কবুল হয়ে যায়।
নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ
- যে দোয়ায় গলার কাঁটা নেমে যাবে ইনশাল্লাহ!
- ফরজ নামাজের পর প্রয়োজনীয় কিছু আমল
- দরুদে ইব্রাহিম
- মা-বাবার জন্য দোয়া
- তাহিয়্যাতুল-মাসজিদ
মসজিদে ঢুকেই দু’রাকাত নামাজ... - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি...
- দরুদে ইব্রাহিম
- কোরআন হাদিসের আলোকে জুমা’র দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- ঋণ মুক্তির সর্বোত্তম আমল
- ফজিলতপূর্ণ কিছু দোয়া ও আমলসমূহ
- পবিত্র কোরআনের তথ্যকণিকা
- জুমার দিনের ৩ আমল
- হযরত আদম আ. এর বিয়ের মহর কত ছিল!
- ফেরেশতা পরিচিতি...
- ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে’